শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপি সভাপতির বাড়ির সামনে বিজিবি-র‌্যাব

প্রকাশিতঃ ২০ জানুয়ারি, ২০১৬  

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাম্প্রতিক ঘটনার সঙ্গে বিএনপি নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। বলেছে ঘটনার সময় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ বা স্থির ছবি পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীরা সংশ্লিষ্ট কিনা। উদোর পিণ্ডি বুধোর গাড়ে চাপাতেই বিএনপিকে এ ঘটনায় জড়ানো হয়েছে। ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাউকে হয়রানি না করার আহ্বান জানান। এ ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেয়া মামলায় জেলে থাকা এক নেতার নাম রাখা হয়েছে বলেও জানান বিএনপি নেতারা। তারা মাদরাসা ছাত্র হত্যা ও ভাঙচুরের ঘটনার নিন্দা জানান।
গতকাল সকাল ১১টায় জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচির মোড়াইলস্থ বাসভবনে এই সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সকাল থেকে কচির বাড়ির সামনে ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অবস্থান নেয় ৪ প্লাটুন বিজিবি ও এক প্লাটুন র‌্যাব সদস্যসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ। ঠিক সময়ে জেলা বিএনপির এই নেতার বাড়ির সামনে সাংবাদিকরা জড়ো হন। কিন্তু বাড়ির গেট বন্ধ দেখতে পাওয়া যায়। খবর মিলে পাওয়ার হাউজ রোডে সংবাদ সম্মেলন হবে। এরপর সাংবাদিকরা সেখানে ছুটে যান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের শিমরাইলকান্দি এলাকায় পাওয়ার হাউজ রোডে জড়ো হন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন ও সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ জেলা বিএনপির আরও কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা সেখানে রাস্তার ওপর দ্রুত সংবাদ সমেলনটি করেন। সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে পুলিশের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর গাড়িবহর পাওয়ার হাউজ রোডে ঢুকলে বিএনপি নেতাকর্মীরা একটি গলি দিয়ে ছুটে পালান। সংবাদ সম্মেলনেকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতার বাড়ির সামনে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে কিনা এ প্রশ্নে কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেলা প্রশাসনের এনডিসি রুহুল আমিন বলেন-আমরা রুটিন ডিউটি করছি।
দৌড়ের ওপর সংবাদ সম্মেলন: লিখিত বক্তব্যের কপির জন্য অপেক্ষা কয়েক মিনিট। সামনের রাস্তার দিকে নজর নেতাদের। সাংবাদিকরাও তাড়া দিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই কপি হাতে চলে আসে। শুরু হয় পড়া। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষর করা ৩ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যটি পড়ে শুনান সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন। এতে বলা হয়- পূর্বের বিভিন্ন মামলায় গত ২৬শে অক্টোবর জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আদালতে হাজির হন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের জেল হাজতে পাঠায়। এরপর ৪ বার জামিন হলেও সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে শ্যোন অ্যারেস্ট করে তাদের কারামুক্তিতে বাধা দেয়া হয়। গত ১১ই জানুয়ারি পঞ্চম বারের মতো হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে ৭৭ দিন পর নেতাকর্মীরা মুক্তি পান।
সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে বলা হয়- নাসিরনগর উপজেলার ধনকুড়া গ্রামের হযরত শাহজালাল (র:) মসজিদ এর পাশে মাদরাসা নির্মাণ কাজ চলাকালীন স্থানীয় মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী সায়েদুল হকের নির্দেশে মাদরাসার কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ১১ই জানুয়ারি সকালে কওমি ছাত্র ঐক্যপরিষদের উদ্যোগে জেলা জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ হয়। এদিন বিকালে মিছিলে নেতৃত্বদানকারী কওমি ছাত্র ঐক্যপরিষদের সেক্রেটারি খালেদ মোশাররফ কাউতলী যাওয়ার পথে জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে পৌঁছলে বিজয় টেলিকমের মালিক পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. সেলিম মিয়ার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা রনি এবং মার্কেটের সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল খানের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মোশাররফকে নাজেহাল করা হয়। নাজেহালের খবর মাদরাসায় পৌঁছামাত্র মাদরাসার ছাত্ররা দলবদ্ধ হয়ে বিজয় টেলিকমে হামলা করে। এ খবর সারা শহরে ছড়িয়ে পড়লে এর প্রতিবাদে সারা শহর থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা লগিবৈঠা-অস্ত্র সজ্জিত হয়ে জয়বাংলা স্লোগানে মিছিল নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুসলমানদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মসজিদ ও মাদরাসায় নামাজ চলাকালে নজিরবিহীন হামলা চালায়।এতে মাদরাসার অনেক ছাত্র আহত হয়। মাদরাসা কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে এই হামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন ওসি আকুল চন্দ্র বিশ্বাস ও এএসপি তাপস রঞ্জন ঘোষ। ঐ সময় শহরের বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসার মাইক থেকে তৌহিদী জনতাকে মাদরাসা রক্ষার জন্য মাইকে আহ্বান জানানো হয়। ১২ই জানুয়ারি ভোররাতে হাফেজ মাসুদুর রহমানের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সারা শহরের ও আশপাশ এলাকার তৌহিদী জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। মাদরাসায় হামলার সময় ব্যবহ্রত গুলি টিয়ার শেল জায়েজ করার জন্যে বিএনপির বিরুদ্ধে সাজানো ও ভূয়া মামলা দেয় পুলিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোনো লোকই বলতে পারবে না ঐ সময় বিএনপি মিছিল করেছে। ভিডিও ফুটেজ ও স্থির ছবিই যা প্রমাণ করবে। এ ঘটনায় যে মামলা দেয়া হয়েছে তাতে কারান্তীরণ মাহমুদুর রহমান মাহিনকেও আসামি করা হয়েছে। তারা বলেন ঘটনার পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার পুরো ঘটনার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিএনপিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়ানো হচ্ছে। তারা আগামী পৌরসভা নির্বাচনে মাঠ থেকে বিএনপিকে দূরে রাখার জন্যই এই অপকৌশল করেছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি নেতা এবিএম মোমিনুল হক, আসাদুজ্জামান শাহিন, পৌর কাউন্সিলর কাউছার মিয়া প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য শেষ হওয়ার পরপরই যৌথ বাহিনীর গাড়িবহর ঐ সড়কে প্রবেশে করে। তা দেখে নেতাকর্মীরা গলির ভেতর ঢুকে পড়েন।
এদিকে মাদরাসা ছাত্র-ব্যবসায়ী-পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ও শহরজুড়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় যুবদল নেতাসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
তারা হচ্ছে- সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছয়বাড়িয়া গ্রামের সায়েদুল ইসলাম সাহেদ, কান্দিপাড়া মহল্লার রাব্বি মিয়া (২৫), মধ্যপাড়ার শাহজাহান মিয়া (২৬) ও ছোটন মিয়া। যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয় রোববার রাতে। অন্য ৩ জনকে শনিবার রাতে। এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাইনুর রহমান বলেন গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে এ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পরিদর্শনে কেন্দ্রীয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট: তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গনসহ বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন গতকাল কেন্দ্রীয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নেতৃবৃন্দ। পরে তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংস্কৃতিক জোট নেতা আবদূন নূরের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রেীয় সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নেতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, হাসান আরিফ, মান্নান হীরা, আক্তারুজ্জামান, চন্দন রেজা, আহমেদ গিয়াস, নাজমুল আহসান পাখি, মঞ্জুর চৌধুরী প্রমুখ। তারা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই ঘটনা শুধু সংস্কৃতির ওপর আঘাত নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত। তাই এখনই সংস্কৃতি কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তারা। বলেন তা না হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে