শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাড়ছে পাটের বস্তার ব্যবহার

প্রকাশিতঃ ০১ মার্চ, ২০১৬  

কুষ্টিয়া : কয়েক মাস আগেও কুষ্টিয়ার বাজারগুলোতে প্লাস্টিকের তৈরি বস্তার দারুন দাপট ছিল। এখন সেখানে ব্যবহৃত হচ্ছে পাটের বস্তা। প্লাস্টিকে পরিবর্তে পাটের তৈরি বস্তা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দিনদিন।

বিশেষ করে কুষ্টিয়ার খাজানগরে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকামে পাটের তৈরি বস্তা ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিদিন কয়েক লাখ বস্তা ব্যবহার হচ্ছে চালকলগুলোতে। এছাড়া গম, ভুট্টা, সারসহ অন্যান্য খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হচ্ছে পাটের বস্তায় ভরে। সরকারি সিদ্ধান্তের পর স্থানীয় জেলা প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে ব্যবসায়ীরা পাটের বস্তা ব্যবহার শুরু করেছে।
প্রথম দিকে ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিকের তৈরি বস্তা ব্যবহারে অনড় থাকলেও পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু হলে দমে যান তারা। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগর এলাকায় গড়ে উঠেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম। এখানে প্রায় ৪ শতাধিকের ওপর চালকল রয়েছে। প্রতিদিন কয়েক লাখ বস্তা চাউল এ মোকাম থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। কয়েক মাস আগেও এসব চালকলগুলোতে ব্যবহার করা হতো প্লাস্টিকের তৈরি বস্তা। তবে এ দৃশ্যপট এখন আর নেই। প্রতিটি চালকলে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশে তৈরি পাটের বস্তা।

সবার মধ্যে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাটের বস্তা। এ জন্য জেলা প্রশাসন ও পাট অধিদপ্তর থেকে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে।

চালকল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল মজিদ বাবুল জানান, সরকার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই আমরা পাটের বস্তা ব্যবহার শুরু করেছি। প্রথম দিকে আমাদের মধ্যে অনেকেই আপত্তি জানালেও জেলা প্রশাসন থেকে বারবার চাপ সৃষ্টির পর ব্যবসায়ীরা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসে। এখন প্রতিটি মোকামে পাটের বস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে।

ফোর স্টার রাইস মিলের মালিক ও চালকল মালিক সমিতির অন্যতম নেতা মফিজ উদ্দিন জানান, গত কয়েক মাস ধরে তারা পাটের বস্তা ব্যবহার শুরু করেছেন। পাটের বস্তা দেশীয় পণ্য হওয়ায় সবার মধ্যে এটি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।

কুষ্টিয়া পৌর বাজারের চাল বিক্রেতা শাপলা টেড্রার্সের মালিক আশরাফুল ইসলাম জানান, পাটের বস্তায় চাল ভরে তারা বিক্রি করছেন। বাজারের সব ব্যবসায়ী পাটের বস্তা ব্যবহার করছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে কয়েক মাস আগে সরকারি ৬টি পণ্য বাজারজাত করণে প্লাস্টিকের বস্তা নিষিদ্ধ করে। এরপরও জেলায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করে আসছিল। সে সময় জেলা প্রশাসন সাঁড়াশি অভিযানে নামে। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানার পাশাপাশি জব্দ করে প্লাস্টিকের বস্তা। এরপর ব্যবসায়ীরা পাটের বস্তা ব্যবহারে উদ্যোগী হন।

এদিকে পাটের বস্তা ব্যবহারে এগিয়ে থাকায় সরকার কুষ্টিয়াকে সেরা জেলার স্বীকৃতি দিয়েছে। পাটের বস্তা ব্যবহারে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসনকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাফিজ আল আসাস জানান, এই মুহূর্তে কুষ্টিয়ার বাজারগুলোতে ধান, চাল ও গম বাজারজাতে পাটের বস্তা ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তারা বাজার মনিটরিং করছেন। জেলা প্রশাসন থেকে বাজারে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মাঝে মাঝে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকি।

জেলা পাট অধিদপ্তরের পরিদর্শক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘জেলায় যেন ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটের বস্তা ব্যবহার করে এর জন্য তদারকি করেছি। এমনকি বারংবার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সফল হয়েছি। এখন অনেকেরই পাটের বস্তা ব্যবহার করছে।’

জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন জানান, সরকারি নিদের্শনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন কাজ করছে। পাট শিল্পকে বাঁচাতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলার সব চালকলে পাটের বস্তা ব্যবহার শুরু হয়েছে। সবখানে পাটের বস্তা ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কেউ যদি আইন লঙ্ঘন করে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।2016_03_01_11_34_29_I3z00x3Szi7yYPiJ7hnXL96WsGlpFh_original