উৎসবমুখর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়
প্রকাশিতঃ ১৮ মার্চ, ২০১৬
ঢাকা : বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল ও সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মী ও কাউন্সিলরদের আগমনে দলটির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুখরিত হয়ে উঠেছে। কাউন্সিল ঘনিয়ে আসায় কার্যালয়ে এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের ভিড় লেগেই থাকছে।
তৃণমূলের পাশাপাশি সেখানে আসছেন কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। আসছেন বিএনপিপন্থি বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও। ফলে পাঁচতলা বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রতিটি তলায় এখন লোক গিজগিজ করছে, যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
এ ছাড়া কার্যালয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাউন্সিল সফলে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন নেতা ও কার্যালয়ের স্টাফরাও। সব মিলিয়ে কার্যালয়টি এখন চাঁদের হাটে পরিণত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি কার্যালয়ের নিচতলায় ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একটি ভিডিও গানের অ্যালবামের উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
অনুষ্ঠানে কাউন্সিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ফেরাতে দেশকে নিয়ে আমরা কী ভাবছি, কাউন্সিলে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। কাউন্সিলের দিকে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা তাকিয়ে আছেন। সুতরাং কাউন্সিলেই তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।’
এরপর থেকে নিচতলায় ছোট পর্দা ও সাউন্ডবক্সের মাধ্যমে কাউন্সিলকে নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও গান প্রচার করা হচ্ছে। কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী, পথচারী ও উৎসুক জনতা তা দেখছেন।
কাউন্সিলের দিন ঘনিয়ে আসায় গত কয়েকদিন ধরে কার্যালয়ে দলের মধ্যম সারির নেতাদের পাশাপাশি আসছেন সাবেক অনেক ছাত্রনেতা। ঘুরে-ফিরে এসব নেতাদের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেখানে দেখা যাচ্ছে। মাঝে-মধ্যে দলের প্রথম সারির নেতারাও আসছেন। তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম।
ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতা-কর্মীরা কাউন্সিলর-ডেলিগেটস কার্ডের জন্য নিজেদের নাম তালিকাভুক্তিকরণ ও কার্ড সংগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ আবার কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিড় করছেন। কেউ বা স্রেফ জাতীয় কাউন্সিলের মহাকর্মযজ্ঞ দেখার জন্য হাজির হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
দাপ্তরিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ দায়িত্বশীল নেতারা। রিজভী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী-কবি-সাহিত্যিকদের আমন্ত্রণ জানানোর কাজের তত্ত্বাবধান করছেন। ইতোমধ্যে তিনি তার কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন। স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা তেনজিংসহ অন্যরা ডেলিগেটস কার্ড সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছেন।
তত্ত্বাবধায়ক রুস্তম আলীর কাছে মাসিক চাঁদা পরিশোধ করে কাউন্সিলররা নিজে অথবা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে সংগ্রহ করছেন এ কাউন্সিলর কার্ড। গত কয়েকদিন ধরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একাধারে কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপি কার্যালয়ের প্রবীণ এই স্টাফ। কারো সঙ্গে কথা বলার অবসর নেই তার। এছাড়া কার্যালয়ের অন্য স্টাফ মো. দলিল উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, শামীম হোসেন, জলিল মৃধা, ফারুক হোসেন, মো. আজাদ, নুর আলম লিটন, মোয়াজ্জেম হোসেন, আব্দুর রহিম, নাসির মৃধা, মো. রফিক, রেকর্ড কিপার আবদুল গাফফাররাও নানা কাজ নিয়ে রয়েছেন দারুণ ব্যস্ত।
দাপ্তরিক কাজ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দারুণ ব্যস্ত কার্যালয়ের কর্মকর্তা রেজাউল করিম। এছাড়া আহার-নিদ্রা ছেড়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলামও রয়েছেন ব্যস্ততায়। তিনি কাউন্সিলকে ঘিরে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
কাউন্সিল সফলে গঠিত আপ্যায়ন উপ-কমিটির আহ্বায়ক আবদুস সালাম কমিটির সদস্যদের নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে কার্যালয়ের তৃতীয় তলার কনফারেন্স রুমে দফায় দফায় বৈঠক করেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাকে প্রায় সার্বক্ষণিক কার্যালয়ে দেখা যায়। অনেক দিন পরে সক্রিয় ঢাকা মহানগর বিএনপির এই নেতার সঙ্গে দেখা করতে নগরের বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের ভিড় সেখানে লেগেই থাকছে। আপ্যায়ন উপ-কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পাওয়ার মধ্য দিয়ে সালামের সক্রিয়তায় তারা যেন দারুণ খুশি!
কার্যালয়ের সামনেও নেতা-কর্মীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবস্থান করছেন। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে গল্প-গুজবে মত্ত রয়েছেন তারা। কাউন্সিলকে ঘিরে বিএনপি কার্যালয়ের উৎসবমুখর পরিবেশে আনন্দিত তারা। দলের কাউন্সিল কেন্দ্রিক আনন্দযজ্ঞে শরিক হতেই মূলত তাদের এখানে আসা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের অংশের পুরোটাই কাউন্সিলের লোগো ও স্লোগান সম্বলিত ব্যানারে ছেয়ে ফেলা হয়েছে। কার্যালয়ের আশপাশ ও সামনের অনেক ভবনও বিভিন্ন ব্যানারে ছেয়ে গেছে।
দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, কাউন্সিলকে ঘিরে সারা দেশ থেকে কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে আসছেন। ফলে সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আশা করছি, এ ধারা অব্যাহত থাকবে।