শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কাপড় ধুতে লাগবে না পানি

প্রকাশিতঃ ২৩ মার্চ, ২০১৬  

ডেস্কঃ বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ সময়ে অর্থ উপার্জনের ধান্দায় প্রত্যাহিক কাজকর্ম করা খুব একটা সহজ হয়ে ওঠে না মানুষের জন্য। একটা সময় মানুষ যে কাজ নিজেই সময় নিয়ে করতে পারতো, আজ সেই কাজ করার জন্য গৃহপরিচারিকা থেকে শুরু করে উন্নত বিশ্বে অনেক বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। ইউরোপে এমনকি একটি জনপ্রিয় শিল্প হলো কাপড় ধোয়া শিল্প। বাংলা অঞ্চলে ধোপাকে সামাজিক স্তরভেদে খুব একটা সম্মানের চোখে দেখা না হলেও, ইউরোপের দেশগুলোতে এই কাজে নিয়োজিত মানুষদের অনেক সম্মানের সঙ্গে দেখা হয়। কারণ, আপনার প্রতিদিনকার ব্যবহৃত কাপড়টি অন্য একজন ধুয়ে দিচ্ছেন এটা সহজ ব্যাপার না। হয়তো সেই ব্যাক্তিটি ওই কাপড়গুলো স্রেফ মেশিনের সাহায্যেই ধোয়, তবু কষ্ট কম হয় না।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার একদল ন্যানোটেকনোলজি বিষয়ক গবেষক এমন একধরণের তন্তু বা কাপড় তৈরি করেছে যা পরিস্কার করতে ব্যবহার করা লাগবে না সাবান বা ডিটারজেন্ট। এমনকি কোনো পানিও লাগবে না আর কাপড়ের ময়লা পরিস্কার করতে। মেলবোর্নের আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অল্প খরচে এবং জৈব উপাদান ব্যবহার করে ওই তন্তু তৈরি করেছেন, সঙ্গে ব্যবহার করেছেন ন্যানোটেকনোলজি। এর ফলে যদি কেউ এই নতুন আবিস্কৃত কাপড় পরিস্কার করতে চান তাহলে কাপড়টি স্রেফ কোনো আলোর উৎস বা সূর্যের আলোর নিচে রাখলেই হবে। আর তাতেই দিব্যি পরিস্কার হয়ে যাবে আপনার সাধের কাপড়টি। বারবার ধোয়ার ফলে তাই কাপড় নষ্ট বা এর ঔজ্জ্বল্যতা নষ্ট হওয়ারও কোনো ভয় থাকবে না।
অবশ্য এধরণের কাপড় তৈরির চেষ্টা যে এটাই প্রথম তা কিন্তু নয়। এর আগে একদল ন্যানো টেকনোলজি গবেষক তামা এবং রুপার মিশ্রনে একধরনের ন্যানোস্ট্রাকচার তৈরি করেছিলেন। ওই উপাদানটি উজ্জ্বল আলোর সামনে আসলে ‘হট ইলেকট্রন’ তৈরি করতে শুরু করতো এবং এক পর্যায়ে শক্তি নির্গত হওয়া শুরু করতো। এর আগেও এধরনের কাপড় তৈরি করা হয়েছিল, তবে সেটা ছিল অনেক ব্যয়বহুল এবং সীমিত ক্ষেত্রে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে। পাশাপাশি ওই কাপড় তৈরিতেও অনেক সময় লাগতো।
আর এখানেই আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নতুন এক পন্থা খুঁজে পেয়েছেন। সোজাসাপটা তারা টেক্সটাইল দিয়েই এই ন্যানোস্ট্রাকচার তৈরি করেন। সূক্ষ্ণ তন্তুগুলোকে একটি নির্দিষ্ট মিশ্রনের মধ্যে ঢালার পর ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই তন্তুর সঙ্গে ওই ন্যানোস্ট্রাকচার দৃঢ়তার সঙ্গে লেগে থাকতে পারে। যখনই সূর্যের বা কোনো তীব্র আলো ওই তন্তুর উপর পরে, তখন পরবর্তী ছয় মিনিটের মধ্যে ওই ন্যানোস্ট্যাকচার তন্তুটির ময়লা পরিস্কার করে ফেলে।
2016_03_23_15_00_23_Sa7IsemJrGPsfcvjEeQeqJj52LJ4sd_originalগবেষক দলটি এখন ন্যানোটেকনোলজি খাটিয়ে কৃত্তিম খাবার তৈরির চেষ্টায় আছেন। বিশেষ করে ওয়াইন অথবা টমোটো সস তৈরিরও চেষ্টায় আছেন তারা। গবেষক দলের সদস্য ড. রাজেশ রামানাথন জানান, ‘এই পদক্ষেপ আগামীতে আরও অনেক দূরে যাবে এবং ভবিষ্যতে কোনো কাপড় ধুতেই আর পানির ব্যবহার করা লাগবে না।’ বিজ্ঞানের অনেক ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক আমরা গত বিংশ এবং চলতি একবিংশ শতাব্দী ধরে দেখছি। তবে ন্যানোটেকনোলজি যদি সত্যিই মানবের কল্যাণে কাজে লাগানো যায় তাহলে হয়তো নিকট ভবিষ্যতে আমরা অনেক জৈব প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হবো। এই কাপড় ধুতেই যদি পানি বা সাবান আর ব্যবহার না করতে হয়, তাহলে একবার ভেবে দেখুন প্রতিদিন কি পরিমান পানি বেঁচে যাবে পৃথিবীতে।