মঙ্গলবার ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

জনগণকে সেবা দেওয়া দয়া-দাক্ষিণ্যের বিষয় নয়,সেবা পাওয়াটা জনগণের অধিকার : রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিতঃ ১৮ জানুয়ারি, ২০২২  

অনলাইন ডেস্ক:সরকারের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

তিন দিনব্যাপী জেলাপ্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রথম দিন আজ মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে (ভার্চ্যুয়াল) এ কথা বলেন তিনি।

মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশের আনাচে-কানাচে মাদকের অপব্যবহার যুবসমাজকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। মাদকদ্রব্য যাতে যুবসমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে না দেয় সে দিকেও আপনাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। তাই মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ’

মাঠ প্রশাসনে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দুর্নীতি উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায়। দুর্নীতির কারণে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ’

ক্ষমতার অপপ্রয়োগ যেন না হয়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিটি স্তরে দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। দায়িত্ব সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। কিন্তু ক্ষমতার যাতে অপপ্রয়োগ না হয়, তা নিশ্চিত করা আরও বেশি জরুরি। তাই কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য সচেতনভাবে বজায় রাখবেন। ’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দেবেন। আমরা আপনারা জনগণের সেবক। তাই জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেবেন। মনে রাখতে হবে জনগণের টাকায়ই আমাদের সংসার চলে। তাই জনগণকে সেবাদান কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য বা বদান্যতার বিষয় নয়। সেবা পাওয়াটা জনগণের অধিকার। ’

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের নেওয়া কর্মসূচির সুফল যেন প্রকৃত দরিদ্ররা পায় তা নিশ্চিত করতে বলেন রাষ্ট্রপ্রধান।

ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা খুব বেশি ও সরাসরি যা গ্রামীণ বিরোধ ও মামলা মোকদ্দমার অধিকাংশ জমিসংক্রান্ত উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার দক্ষ, আধুনিক, জনকল্যাণমুখী ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভূমিসংক্রান্ত জনবান্ধব সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জনগণকে ভূমি বিষয়ক সেবা প্রদানের জন্য ডিজিটালি কাজ করে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, কিন্তু ভূমি রেকর্ডের সময় এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারী স্থানীয় প্রভাবশালী দালালচক্রের সহযোগিতায় অনেক অনিয়ম করছে এবং অবৈধ সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে জনভোগান্তি বেড়েছে। তাই তিনি এসব ব্যাপারে ডিসিদের কঠোর হতে আদেশ দেন এবং যে কোনো অনিয়ম বন্ধ করতে শক্ত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেন। রাষ্ট্রপতি সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করার আদেশ দেন।

তিনি বলেন, সরকার তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে, সরকারি তথ্য ও সেবা নাগরিকের জন্য সহজলভ্য করার লক্ষ্যে জেলা ই-সার্ভিস সেন্টার, পৌর ডিজিটাল সেন্টার ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছে। এ সেবাকেন্দ্রগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে ডিসিদের জোরালো ভূমিকা রাখার এবং তথ্য-প্রযুক্তি সেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা সদরে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সামনে জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব দেখার কেউ নেই। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে বন, নদী ও পাহাড় রক্ষা করতে কঠোর হতে হবে। এটা করতে পারলেই উন্নয়ন সুষম ও জনমুখী হবে।

তিনি বলেন, ‘নবতর উদ্ভাবনী চর্চা ও সেবামূলক কর্মপ্রয়াসের দ্বারা আপনারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবেন এটাই সকলের প্রত্যাশা।’

রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ গড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ২০৩০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ এসডিজির সকল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে এবং ২০৪১ সালে উন্নত অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।”

তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় চার নেতা এবং অমর শহীদদেরকে, যাঁদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।