শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সেই ব্যাংক ম্যানেজারের পালানোর চেষ্টা!

প্রকাশিতঃ ১২ মার্চ, ২০১৬  

নিজস্ক প্রতিবেদক2016_03_11_20_09_22_HxIFzTkoJbbjiGaS9nee2rZ7npVApd_original2016_03_11_20_09_22_HxIFzTkoJbbjiGaS9nee2rZ7npVApd_original বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল অংকের টাকা চুরিতে ফিলিপাইনের সন্দেহভাজন ব্যাংক ম্যানেজার মাইয়া সান্তোস দিগুইতাকে বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে জাপান যাওয়ার পথে ম্যানিলা বিমানবন্দরে তাকে বিমান থেকে নামিয়ে নেন ফিলিপাইন গোয়েন্দারা।

দেশটির রিজাল কর্মাশিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিটের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার দিগুইতা। জাপানের নারিতার উদ্দেশে ম্যানিলা ছাড়তে বিমানে উঠেছিলেন তিনি।
বিমানবন্দরে মাইয়া সান্তোস দিগুইতা

মাকাতি সিটির ওই শাখায় বেশ ক’মাস আগে ৫টি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের নিউইয়র্ক শাখা থেকে ফেব্রুয়ারির ৫ থেকে ৯ তারিখের মধ্যে চুরি যাওয়া অর্থের ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থানান্তর হয় এ শাখায়। আগে থেকেই অ্যাকাউন্টগুলোতে সেই অর্থ বণ্টনের ব্যবস্থা করেন দিগুইতা- এমন অভিযোগ রয়েছে।

বিপুল অংকের এ টাকা নিয়ে তদন্ত করছে ফিলিপাইনের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিলও। একইসঙ্গে এত বড় ঘটনায় দেশটির সিনেট কমিটিতেও শুনানি হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার সন্দেহভাজন অন্যদের পাশাপাশি রিজাল কর্মাশিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকেও ডাকা হয়েছে শুনানিতে।

সিনেট কমিটির শুনানি রেখেই দিগুইতা যাচ্ছিলেন দেশের বাইরে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি পালাচ্ছিলেন। অবশ্য বিমানবন্দরে এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে এ ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ছোট ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নারিতায় যাচ্ছিলেন। মঙ্গলবারই ফিরে আসতেন তিনি।

দিগুইতা উপস্থিত সংবাদ কর্মীদের বলেন, ‘আমি জানি কঠিন এক সময় পাড় করছি আমি। মা হিসেবেও আমার দায়িত্ব আছে। সেটা একেবারে অবজ্ঞা করা যায় না। এ বিষয়ে সিনেটকে আমি অবহিত করেছি যে, আগামী মঙ্গলবার শুনানিতে আমি উপস্থিত থাকবো।’

আরসিবিসি ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আরও বলেন, ‘আমার ছেলে বুঝতে পারছে না যে, আমদের কেন বিমানে উঠতে দেয়া হলো না, এতে সে ডিজনিল্যান্ডে যেতে পারলো না। আমাদের চারপাশে কেন এত লোক, কেন আমাদের ছবি তুলছে। যা ঘটছে সে সম্পর্কে আমার ছেলে কিছুই জানে না।’

তিনি বলেন, ‘আমার বিদেশ যাওয়ায় কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। বিমানবন্দরেও আমাকে এ সম্পর্কে কোনো কিছু অবহিত করা হয়নি। বিমানে উঠে আমরা বসেছি। এসময় বিমানের একজন কর্মী এসে আমাকে জানালো যে, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কোর কর্মকর্তা আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। ওই কর্মকর্তা আমাকে জানান যে, আমার স্বামী এবং ছেলে যেতে পারবে। আমার যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে। আমার স্বামী ও সন্তান আমাকে ছাড়া যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’

দিগুইতা বলেন, ‘ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আমাকে অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিলের একটি চিঠি দেখান। ওই চিঠিতে বলা হয় মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে আমার যোগসাজশ রয়েছে। যদিও আমাকে অভিযুক্ত করে কোনো মামলা হয়নি।’

আরসিবিসি কর্তৃপক্ষ এ কর্মর্তার বিরুদ্ধে ব্যাংকের মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন অমান্যের অভিযোগ তদন্ত করছে। একইসঙ্গে ভুল তথ্য দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার অভিযোগও রয়েছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে যে ১০০ কোটি ডলার চুরি গেছে তার একটি অংশ (৮১ কোটি ডলার) ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক হয়ে ক্যাসিনোর মাধ্যমে হংকংয়ের একটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। এই টাকাগুলো ওই ব্যাংকেরই পাঁচটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এসেছিল। সেই অ্যাকাউন্টগুলো স্থগিত করে দেয়া হয়েছে এবং সন্দেহভাজন পাঁচ জন শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

বাকি ২০ কোটি ডলার শ্রীলংকার একটি এনজিওর নামে গিয়েছিল। কিন্তু নামের ভুলের কারণে সেটি ধরা পড়ে এবং তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।